পুনজাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান ও দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবীসহ ১৮ দফা দাবী আদায়ের লক্ষ্যে- জাতীয় মুক্তিমঞ্চ
বিস্মিল্লাহহির রাহমানির রহিম,
উপস্থিত সম্মানিত সাংবাদিক ভাইবোনেরা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সূধী মÐলী। আস্সালামুআলাইকুম।
আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে আপনাদের সকলকে স্বাগত জানাচ্ছি। দেশবাসীর উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই যে, একজন তরুণ ক্যাপ্টেন হিসেবে ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাত্রি জাতির দুর্দিনে ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্টকে সাথে নিয়ে, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে, সুপরিকল্পিতভাবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম বিদ্রোহ করি। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বীরত্বের জন্য সর্বপ্রথম খেতাব পাই এবং যুদ্ধ চলাকালীন সেনা বাহিনীর একমাত্র বাঙালী ব্রিগেড মেজর হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। অত্যন্ত সুনামের সাথে সামরিক বাহিনীতে চাকুরীরত ছিলাম। চাকুরীরত অবস্থায় ১৯ বার বিদ্রোহের মুখোমুখি হই এবং সাহসিকতার সাথে তা মোকাবিলা করি। পরবর্তীতে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অনুরোধে ১৯৭৭ সালে রাজনৈতিক দল গঠনের দায়িত্ব গ্রহণ করি। যা পরবর্তীতে বি.এন.পি নামে জনগণের মধ্যে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বর মাস হইতে ১৯৭৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের একজন ছায়াসঙ্গী ছিলাম। এখানে উল্লেখ্য যে, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ি। ১৯৭৯ সালের নভেম্বর মাসে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অনুরোধে ১৩ বৎসর চাকুরী অবশিষ্ট থাকা অবস্থায় স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করি। ১৯৮০ সালে সর্বপ্রথম এম.পি হিসেবে নির্বাচিত হই। ১৯৮১ সালে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে যুব উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত হই। কয়েক মাস অতিবাহিত হতে না হতেই লে. জেনারেল হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ অন্যায়ভাবে সামরিক শাসন জারি করে, সমগ্র জাতিকে বিপদের দিকে ঠেলে দেন। অতঃপর রাজনৈতিক পরিস্থিতি ধীরে ধীরে কলুষিত হয়, রাজনীতিবিদরা হয়ে পড়েন দুর্নীতিগ্রস্ত। দীর্ঘ নয় বৎসর জনগণের সংগ্রামের ফলে ১৯৯০ সালের ডিসেম্বর মাসে এরশাদ সরকারের পতন হয়। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে, সর্বদায় আপোষহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পাশে ছিলাম। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে, দুইবার কারাবরণ করেছি। বহু নির্যাতনের শিকার হয়েছি। উল্লেখ্য যে, ১৯৯১ সালের ফেব্রæয়ারী মাসে তত্ত¡বধায়ক সরকারের অধীনে নতুনভাবে জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ঐ নির্বাচনে বি.এন.পি জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। নিঃসন্দেহে বলা যায় ১৯৯১ থেকে ১৯৯৫ সাল ছিল তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্বর্ণযুগ।
পরবর্তীতে ১৯৯৬ সাল হতে ক্রমান্বয়ে দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা বৃদ্ধি পেতে থাকে, তথাপি সীমা অতিক্রম করে নাই। ২০০৬ সালে তা চরম আকার ধারণ করে। ফলে দেশে আধা সামরিক শাসন জারী করা হয়। বড় দুই রাজনৈতিক দলের নেত্রী কারাবরণ করেন। এছাড়াও অনেক মন্ত্রী, এমপি এবং সাবেক মন্ত্রী দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হন। এদের মধ্যে অনেকে অহেতুক মিথ্যা মামলা, হয়রাণি ও নির্যাতনের শিকার হন। ২০০৬ সালের পর হতে দীর্ঘ ১৩ বৎসরেও প্রকৃত কোন দুর্নীতিবাজ এখনও পর্যন্ত সাজা প্রাপ্ত হয় নাই। এদেশে টাকা থাকলে, সবধরণের অন্যায় করার পরও সহজে পার পাওয়া যায় এবং পুনরায় মন্ত্রী/এমপি হওয়া সম্ভব। বর্তমানে তার অনেক প্রমাণ রয়েছে।
২০০৯ সালে জেনারেল মঈন ইউ আহমদের ষড়যন্ত্রের ফসল হিসাবে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা দখল করে। অন্যদিকে বি.এন.পি’র কৌশল বার বার ব্যর্থ হয়। ফলে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বড় রাজনৈতিক দল বি.এন.পি সহ বিরোধী দলসমূহ অসহায় হয়ে পড়ে। নেতা কর্মীরা হয় নির্যাতিত ও নিপীড়িত, হাজার হাজার মিথ্যা মামলায় জর্জরিত এবং হতাশাগ্রস্ত।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ খালি মাঠে গোল দিতে থাকে। দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, এক সময়ে আওয়ামী লীগ লাঠিসোটা নিয়ে হাইকোর্টও আক্রমন করেছিল। বগুড়া ও দিনাজপুরের তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে, বি.এন.পি সরকার পতনের জন্য আন্দোলন করেছিল। অথচ বর্তমান সরকারের আমলে ৭৬% নারী ও শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, এর বিরুদ্ধে কোন আন্দোলন বা কার্যকরী প্রতিকার নাই। আওয়ামী পন্থী সরকারী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে মঞ্চ তৈরি করে, বি.এন.পি-কে নাজেহাল করার ঘটনাও ঘটেছিল। বি.এন.পি এর চেয়ে শতগুণ, বড় ইস্যু পেয়েও আন্দোলন করতে পারে নাই। কারণ আমাদের মধ্যে অনেকে, অবৈধ পন্থায় উপার্জিত টাকা/ধন সম্পদ রক্ষা করার জন্য সরকারের সাথে সমঝোতা করে কাজ করছি। সরকার বি.এন.পি’র এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে ২০১৪ সালে সুকৌশলে দালালদের মাধ্যমে বি.এন.পি-কে জাতীয় নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ একতরফাভাবে বিনা ভোটে সংসদ এবং সরকার গঠন করে দেশকে এক নায়কত্ব ও নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্রের দিকে একধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়। অন্যদিকে বি.এন.পি-কে মাঠেও নামতে দেওয়া হয় নাই। অনুরূপভাবে ২০১৮ সালে ২৯ ডিসেম্বর রাতের অন্ধকারে আওয়ামী লীগ ব্যালট বাক্স ভর্তি করে শতভাগ ফলাফল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এমনকি বিরোধী দলের নেতা কর্মীদেরকে ভোট কেন্দ্রের নিকটেও যেতে দেওয়া হয় নাই এবং তাদেরকে নিজেদের ঘরেও থাকতে দেওয়া হয় নাই। মূলতঃ ৩০ ডিসেম্বর কোন ভোট হয় নাই। বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতা, কর্মী ও প্রার্থীদের গ্রেফতার করা হয়, মিথ্যা মামলায় জড়ানোসহ সমগ্র দেশে ভয়ানক ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করা হয়, যা ১৯৭১ সালকেও হার মানায়।
স¤প্রতি ঘোষিত বাজেটের প্রেক্ষাপটে আমরা বলতে চাই যে, দেশের অর্থনীতি এখন এক চরম সংকটে উপনীত হয়েছে। অবৈধ সংসদে উত্থাপিত সা¤প্রতিক বাজেট তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বৈষম্যমূলক ও কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি,ঋণ নির্ভর উচ্চাভিলাষি উন্নয়ন কর্মসূচি, স্থবির বিনিয়োগ খাত, নির্লজ্জ দলীয়করণ ও লুটপাটের কারণে, ব্যাংক ও পুঁজিবাজারে সৃষ্টি হয়েছে চরম দুর্দশা, কর ও সার্ভিস চার্জ বৃদ্ধি, কৃষকের ফসলের ন্যায্য মূল্য না পাওয়া এবং সহায় সম্পত্তির মূল্য হ্রাস পাওয়ায়, সমগ্র জাতি এক চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। ব্যাংক ঋণ পাওয়া তো দূরের কথা, অনেক সময় নিজের জমাকৃত টাকা উত্তোলন করতে চাইলে, তাও পেতে দেরি হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২ লক্ষ ২০ হাজার কোটি টাকা খেলাপী ও অকার্যকর ঋণ রয়েছে। জাতীয় সংসদে শুধুমাত্র ঋণখেলাপীদের তালিকা পেশ করলেই, কি সরকারের দায়িত্ব শেষ হয়? অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, ব্যাংকে জনগণের জমাকৃত টাকা উদ্ধারে সরকার আগ্রহী নয়। এইরূপ ভীতিকর সংকটময় অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উদ্ভব হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ, সরকারের দায়বদ্ধহীনতা।
এই ধরণের নাজুক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমরা নির্বিকার থাকতে পারি না। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে। বেগম খালেদা জিয়া যদি কারাগার থেকে মুক্ত হয়, একনায়কতন্ত্র থেকে যদি দেশ মুক্ত হয়, ‘ঞযবহ ঃযব ঘধঃরড়হ রিষষ নব ভৎবব’.
এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমরা ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’ ঘোষণা করছি।
আশাকরি, জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী সকল শক্তি আমাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে জাতিকে মুক্ত করার জন্য এগিয়ে আসবে। বিশেষভাবে, গণতন্ত্রপ্রেমী ও বাংলাদেশপ্রেমী সকল রাজনৈতিক দল, সকল নাগরিক, সামাজিক সংগঠন, সকল প্রবীন এবং তরুণদের প্রতি আমাদের এই আহবান।
আমাদেরকে উপলব্ধি করতে হবে যে, ১৯৭১ সালে লক্ষ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চেতনাই ছিল উদার গণতন্ত্র; একনায়কতন্ত্র নয়। সুতরাং কোন অবস্থাতেই আমরা একনায়কতন্ত্র ও নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র মেনে নিতে পারি না। বর্তমানে সমগ্র পৃথিবী দুইভাগে বিভক্ত। প্রথমটি হচ্ছে একনায়কতন্ত্র ও নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র, দ্বিতীয়টি হচ্ছে উদার গণতন্ত্র। সুতরাং, আমরা বেঁচে থাকতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিসর্জন দিতে পারি না।
আমাদের এবারের কর্মসূচী হবে শান্তিপূর্ণ এবং লক্ষ্য হবে, জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা অর্থাৎ জাতিকে মুক্ত করা তথা ন্যায় বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা, মানবাধিকার নিশ্চিত করা, জনগণের সরকার গঠন করা ধহফ “ঋৎবব ঃযব ঘধঃরড়হ”। বেগম খালেদা জিয়া এবং সকল রাজবন্দিদের মুক্ত করতে হবে, নেতা কর্মীদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। সর্বোপরি প্রশাসনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে। আশাকরি আমাদের এই কর্মসূচীতে জনগণ এবং সকল বিরোধী দল নিজ নিজ অবস্থান থেকে সমর্থন দেবেন, সহযোগিতা করবেন, অংশগ্রহণ করবেন। তবে কোন ধরণের ধ্বংসাত্মক কর্মকাÐে আমাদের সমর্থন থাকবে না। ভয়কে জয় করতে হবে, দেশকে মুক্ত করতে হবে, দেশ আমাদের সকলের। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার লোভের কারণে, জনগণ স্বাধীনভাবে জীবন ও জীবিকার অধিকার হারিয়ে ফেলেছে; তা আমরা হতে দেব না।
রাজনীতিতে আমরা আরো অধিকতর গভীরতা, সমান সুযোগ ও সুবাতাস কামনা করি। অনির্বাচিত জাতীয় সংসদ ও সরকারের অবসান চাই। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সম্মান বোধ কামনা করি। কেউ কাউকে অসম্মান করে বক্তব্য যেন না দেন, তা সকলকে নিশ্চিত করতে হবে।
সকল ধর্ম এবং রাজনৈতিক দলের মতামতের প্রতি আমরা থাকব শ্রদ্ধাশীল। এছাড়াও দেশে বসবাসরত সকল ছোট-বড় নৃ-গোষ্ঠি যেন সমান সুযোগ, সম্মান ও মর্যাদার সাথে বসবাস করতে পারেন, তা আমরা নিশ্চিত করব। জাতিকে বিভক্ত নয় বরং ঐক্যবদ্ধ করাই হবে আমাদের মূল লক্ষ্য।
প্রতিহিংসা, প্রতিশোধ পরায়ণতা, দলীয়করণ, উগ্রবাদ, সন্ত্রাসী কর্মকাÐ এবং অগণতান্ত্রিক রাজনীতি থেকে আমরা নিজকে বিরত রাখতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা কখনও কাউকে কোন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাÐে সহযোগিতা বা সমর্থন দেব না। ধ্বংসাত্মক কর্মকাÐে লিপ্ত হব না। আমরা চাই, মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটুক, সামাজিক অবক্ষয় রোধ হউক। সকলে সমান অধিকার ভোগ করে, সম্মানিত নাগরিক হিসেবে বসবাস করুক। সরকারকে আমাদের সদিচ্ছার উপর আস্থা রাখতে হবে।
অন্যদিকে, আশাকরি সরকার তাদের ভুল পদক্ষেপগুলি অনুধাবন করে, জাতীয় মুক্তির পথ সুগম করবে। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে, জাতিকে মুক্ত করার জন্য আমরা নিজেদেরকে সমর্পণ করতে চাই। সদাসর্বদা আল্লাহ্র সাহায্য কামনা করি।
এখন আমাদের পক্ষ থেকে দেশবাসীর সম্মূখে সরকারের উদ্দেশ্যে আমাদের দাবিগুলো উপস্থাপন করছি।
১। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে জাতীয় সংসদের পুননির্বাচন- গত ৩০শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সালে ঘটে যাওয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইতিহাসের একটি নির্মমতম রাষ্ট্রীয় প্রতারণা, সর্বকালের নিকৃষ্ট জাতীয় বেঈমানী ও প্রহসনের মাধ্যমে নির্বাচন নামের নাটক সৃষ্টি করে, জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করা হয়েছে। জনগণকে ভোটের অধিকার এবং ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। ফলে সমগ্র জাতি মানসিকভাবে চরম আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জনগণের উপর অমানবিক নির্যাতন ও হয়রানি করা হয়েছে। পক্ষান্তরে ৩০শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সালে দিনের বেলা কোন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় নাই। বরং ২৯শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত্রি বেলা ৬০-৭০% ব্যালট পেপার কেটে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা হয়। এই নির্বাচনে ভোটার ছিল পুলিশ ও প্রশাসনের সদস্যবৃন্দ। তাদের প্রার্থী ছিল আওয়ামী লীগের নেতা। কোন অবস্থাতেই এই নির্বাচন এবং এই নির্বাচনের ফলাফল জনগণ গ্রহণ করে নাই। বর্তমান সরকার জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধির দ্বারা গঠিত হয় নাই এবং এতে জনগণের অংশগ্রহণও নাই। অতএব, জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে দেশের এবং দেশের জনগণের মঙ্গলের জন্য আমরা জাতীয় সংসদের পুননির্বাচনের জোর দাবী জানাচ্ছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে যত দ্রæত সম্ভব নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের তত্ত¡াবধানে পুননির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তারিখ ঘোষণা করতে হবে।
২। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবী ঃ- তাঁর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সাজানো মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার। তিন বারের সফল প্রধানমন্ত্রী, একজন প্রবীন রাজনীতিবিদ, সাবেক সেনা প্রধান ও রাষ্ট্রপতি এবং মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাকারীর স্ত্রী। মিথ্যা মামলার নামে তাঁকে হয়রানি, সাজানো বিচারে আটক করে, আর্থিক-শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করা হচ্ছে। এটি একটি গর্হিত কাজ। এতে সরকারের প্রতিশোধ পরায়ণতার প্রমাণ বিদ্যমান।
৩। দেশবিরোধী চুক্তি প্রকাশের দাবি- বিগত দশ বছরে তথা বর্তমান অবৈধ সরকারের সময়ে, যে সকল দেশবিরোধী চুক্তিতে অসম প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছে, তা জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে।
৪। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান রক্ষার দাবী- ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য দেশের জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে, যে সমস্ত মেগা প্রকল্প এবং স্পর্শকাতর রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিদেশীদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে, তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
৫। জাতীয় বিশেষজ্ঞ কমিশন গঠনের দাবী- সাম্প্রতিককালের ভয়াবহ জাতীয় অর্থনৈতিক কেলেংকারী যথা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি, ব্যাংক ডাকাতি, শেয়ার মার্কেট লুটপাট, অর্থ পাচার ইত্যাদি অপকর্মের কারণে দেশে অর্থনৈতিক নীরব দুর্ভিক্ষ, সামাজিক বিশৃঙ্খলা, শিক্ষিত যুবকদের বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের অশনি সংকেত দেখা দিয়েছে। এই ধরণের পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে এবং ভবিষ্যতে যেন তার পুনরাবৃত্তি না হয়, তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের নেতৃত্বে এক বা একাধিক জাতীয় বিশেষজ্ঞ কমিশন গঠন করতে হবে। কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে উক্ত সমস্যাগুলির সমাধান এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৬। দেশের শিক্ষিত যুবকদের নিয়োগে অগ্রাধিকারের দাবী- দেশে শিক্ষিত যুবকদের বেকরত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই বেকারত্ব হ্রাস করার লক্ষ্যে, কারিগরি শিক্ষাকে আরও বেশি সম্প্রসারণ করার নিমিত্তে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এই বেকারত্ব হ্রাস করার লক্ষ্যে প্রশিক্ষিত জনশক্তি বিদেশে রপ্তানীর জন্য কুটনৈতিক ও ব্যবসায়িক পদক্ষেপ জোরদার করতে হবে। এছাড়াও দেশের ব্যবসা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলিতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেশের শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত যুবকদের নিয়োগ নিশ্চিত করার জন্য আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৭। গুম ও খুন বন্ধের পদক্ষেপ নেওয়ার দাবী- দেশের সর্বত্র চরম বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য বিরাজ করছে। এই অবস্থা কারো কাম্য নয়। ন্যায় বিচার, সুশাসন এবং সাংবিধানিক অধিকার না থাকায় জনগণ হতাশাগ্রস্থ। বর্তমান সরকারের আমলে গুম, খুন, গুপ্তহত্যা, মাদক এবং ধর্ষণ মহামারি আকার ধারণ করেছে। জনগণের সরকার ব্যতীত এই ধরনের সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। এই ধরণের কর্মকাÐ বন্ধ করার জন্য অনতিবিলম্বে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং জনগণকে আশ্বস্ত করতে হবে।
৮। ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবী- অবৈধ পন্থায় নির্বাচন অনুষ্ঠান, অনৈতিক ও নির্মম ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সংসদীয় গণতন্ত্রকে হত্যা করার নীল নকশা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে, বিরোধী দলীয় নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে সমগ্র দেশে দায়েরকৃত গায়েবী মামলা, মিথ্যা মামলা, ষড়যন্ত্র মূলক রাজনৈতিক মামলা, অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্থদেরকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৯। লিগ্যাল এইড কমিটি গঠনের ষোঘণা- আমরা ঘোষণা করছি যে, আমাদের পক্ষ থেকে আগামী তিন মাসের মধ্যেই প্রতি জেলায় ‘লিগ্যাল এইড’ কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটির মাধ্যমে বিরোধী দলের নেতা/কর্মীদের মামলাগুলি পরিচালনার সার্বিক দায়িত্ব, আমরা বহন করব। সুতরাং নেতা/কর্মীদের কোন সমস্যা হবে না।
১০। প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ও হয়রানী বন্ধের দাবি- বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, তাদের স্বাভাবিক জীবন যাপনে বাধা দান এবং বিদেশ গমনের সময় বিমান বন্দরে অহেতুক হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
১১। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন, ভেজাল ও নকল ঔষধ বন্ধের দাবী- দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভঙ্গুর। রাষ্ট্রপতিসহ চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর দেশের কেউ আস্থা রাখতে পারছে না। বিধায়, বিত্তবান প্রায় সকলেই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এবং ভারতে চিকিৎসার জন্য অহরহ যাতায়াত করছে। এতে করে দেশের অর্থনীতিতে এবং চিকিৎসা ব্যবস্থায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নতির লক্ষে সুপরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ভেজাল ও নকল ঔষধ উৎপাদন ও বিপনন বন্ধের লক্ষে কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে।
১২। খাদ্যে ভেজালকারীদের মৃত্যুদÐ দাবী- ভেজাল খাদ্য মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। নতুন আইন করে ভেজাল খাদ্য সরবরাহের সাথে যারা জড়িত তাদের জন্য মৃত্যুদÐের ব্যবস্থা করতে হবে।
১৩। কৃষক যেন ন্যায্যমূল্য পায় তার দাবী- অধিক ধান ফলনের কারণে বর্তমানে কৃষকরা দুর্দশাগ্রস্থ, এই ধরণের পরিস্থিতি কারো জন্য কাম্য নয়। প্রতি বৎসর নিয়মিতভাবে সরকারের পক্ষ থেকে ধান সংগ্রহ করার লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ এবং কৃষককে ন্যায্য মূল্য প্রদানের লক্ষ্যে ধানের উপযুক্ত মূল্য নির্ধারণ করতে হবে এবং সেই মূল্য যেন সরেজমিনে কৃষক পায় তার ব্যবস্থা করতে হবে।
১৪। অর্থনৈতিক সমতা ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার দাবী- জনগণের আয় ও ব্যয়ের সাথে কোন সামঞ্জস্য না থাকায় সমাজ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে এবং সর্বত্র সামাজিক অবক্ষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নি¤œমধ্যবিত্ত এবং গরীবদের মধ্যে নীরব দুর্ভিক্ষ চলছে। এই ধরণের সোনার বাংলার জন্য জাতি মুক্তিযুদ্ধ করে নাই। সমাজে অর্থনৈতিক সমতা এবং সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে, প্রয়োজনীয় সঠিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
১৫। জাল ভোট প্রদানকারী ও সাহায্যকারীদের শাস্তি দাবী- জনগণের ভোটের অধিকার, সুশাসন এবং সর্বোপরি সকলের জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। জাল ভোট প্রদান বা প্রদানকারীদের সাহায্য করার সাথে যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িত তাদের জন্য ন্যূনতম ১০ বছর সশ্রম কারাদন্ডের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
১৬। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল দাবী ও বন্ধ করে দেওয়া মিডিয়া খুলে দেওয়ার দাবী- ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে সংসদে পাশকৃত “ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট ২০১৮”- কালো আইন হিসেবে বাতিলের দাবী করছি। এই আইনের মাধ্যমে জনগণের কণ্ঠ রোধ করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে যে সকল সংবাদপত্র, টেলিভিশন এবং জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, তা অবিলম্বে খুলে দিতে হবে।
১৭। দুর্নীতি দমন আইনের বৈষম্য দূরীকরণের দাবী- বর্তমান দুর্নীতি দমন আইনে দারুণ বৈষম্য রয়েছে। এই আইন শুধু অসহায় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হচ্ছে। আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রীসহ সকল নাগরিকের বিরুদ্ধে দুদক স্বাধীনভাবে প্রয়োজনে তদন্ত করতে পারবে ও মামলা করতে পারবে, এই ধরণের বিধান রেখে আইন সংশোধন করতে হবে। দেশের সকল নাগরিকের জন্য আইন সমানভাবে প্রযোজ্য হতে হবে (শুধুমাত্র রাষ্ট্রপতি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকা অবস্থায় এই আইন তাঁর জন্য প্রযোজ্য হবে না)।
১৮। রাজনৈতিক দলগুলির জন্য সাংবিধান অনুযায়ী সুযোগ সৃস্টির দাবী- প্রত্যেক রাজনৈতিক দলকে সাংবিধানিক পন্থায়, বিনা বাধায় নিজ নিজ দলের কর্মকান্ড পরিচালনা করতে দিতে হবে। শান্তিপূর্ণ মিছিল ও জনসভা করার সুযোগ দিতে হবে।
মনে রাখবেন, প্রতিহিংসা ও অহংকার মানুষকে ধ্বংস করে। সমাজকে সঠিক পথে পরিচালনার দায়িত্ব আমাদের সকলের। সমাজের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। এছাড়াও সকল কর্মকান্ডের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট আমাদের সকলকে জবাবদিহি করতে হবে।
সুতরাং, আশাকরি বিরোধী দলসমূহ এবং বিবেকবান ব্যক্তিগণ দলে দলে ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চে’ যোগদান করে জাতিকে মুক্তি এবং সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করার লক্ষ্যে এগিয়ে আসবেন। আল্লাহ আমাদের সহায় হউন।
বাংলাদেশ জিন্দাবাদ
জাতীয় মুক্তিমঞ্চ জিন্দাবাদ।।
প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী’র বক্তব্য ২০২০
তারিখ ঃ ২৬/১০/২০২০ ইং
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু
আজ ২৬শে অক্টোবর রোজ সোমবার ২০২০ সাল এল.ডি.পি’র ১৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। আমাদের সকলের জন্য অত্যন্ত আনন্দ এবং গৌরবের বিষয় হচ্ছে যে, আমরা বাংলাদেশের এক নম্বর নিবন্ধিত একটি রাজনৈতিক দল। আমি আমার পক্ষ থেকে, পার্টির পক্ষ থেকে আপনাদের সকলকে এই শুভ দিনে স্বাগত ও আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। সাথে সাথে দেশের জনগণকে তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য জানাই আমাদের কৃতজ্ঞতা। আল্লাহ্র মেহেরবানীতে, আপনাদের সকলের কঠোর পরিশ্রম, ত্যাগ-তিতীক্ষা এবং আত্মত্যাগের ফলে এল.ডি.পিকে আমরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের অনেক ব্যর্থতা রয়েছে, চলার পথে অনেক বাধা-বিপত্তি আছে।
বিগত প্রায় ১১ বৎসর যাবৎ সমগ্র দেশ একদলীয় শাসনের অধীনে শাসিত হচ্ছে। কারো বাক্স্বাধীনতা নাই। অন্যায়ের প্রতিকার নাই, মানুষ ন্যায় বিচার বঞ্চিত, সমাজে অবিচার অনাচার, মাদকের প্রভাব, দুর্নীতি, খুন, গুপ্ত হত্যা, ধর্ষণ, রাহাজানি, রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের উপর নির্যাতনের কারণে জনজীবন দুর্বিষহ। দেশে সুশাসন অনুপস্থিত, দিনের বেলার পরিবর্তে বন্দুকের নলের মাথায় সরকারী কর্মচারী ও সরকারী দলের গু-া বাহিনীর দ্বারা যৌথভাবে রাত্রি বেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন ব্যবস্থা ও নির্বাচন কমিশন পঙ্গু। এরই মধ্যে টিকে থাকা খুবই কঠিন। বিগত ১০ বৎসরে তিলে তিলে প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও কোথাও সঠিকভাবে ধর্ম কর্ম নাই বললেই চলে। আল্লাহ্র ভয় রাজনীতিবিদদের মধ্যে নাই। আমাদের মধ্যে মন্যুষত্ব লোপ পেয়েছে। এই ধরনের একটি ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে থেকেও, আমরা আমাদের পার্টিকে মানুষের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছি। এল.ডি.পি আজ একটি প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক পার্টি। প্রায় প্রতিটি মহানগর, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন সমূহে স্বল্প সংখ্যক নেতা কর্মীদেরকে নিয়ে হলেও আমরা কমিটি গঠন করতে সক্ষম হয়েছি। এই কমিটিগুলিতে পর্যাপ্ত সংখ্যক মহিলাদের অংশগ্রহন নিশ্চিত করেছি। তারপরও এতে আত্মতৃপ্তির কোন কারণ নাই। আমাদের মূল পার্টি এবং অঙ্গসংগঠনগুলিতে অনেক দুর্বলতা রয়েছে। ধীরে ধীরে সেগুলিকে চিহ্নিত করে, তা শোধরানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
মনে রাখতে হবে, রাজনৈতিক দলে কেউ করো চাকর নয় বা কর্মচারীও নয়। একে অপরের প্রতি দুর্ব্যবহার করার বা নেতৃত্বের প্রভাব খাটানোর ফল সবসময় ধংস ডেকে আনে। আমাদের সকলকে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। প্রত্যেক নেতা কর্মীকে তার নিজের মনোভাব, চিন্তাচেতনা নেতাদের সম্মুখে প্রকাশ করার সুযোগ করে দিতে হবে। বাঁধা সৃষ্টিকারীরা পার্টির বন্ধু নয়। বরং পাটির ক্ষতি ডেকে আনে। সুতরাং আমি আশা করব, আমাদের সকলকে স্বৈরাচারী মনোভাব পরিহার করতে হবে। একে অপরের প্রতি বন্ধুসুলভ আচরণ করতে হবে। এতে করে পার্টি লাভবান হবে, অধিক সংখ্যক মানুষ আমাদের পার্টিতে যোগদানে আগ্রহী হবে।
দেশ আজ গভীর সংকটের মধ্যে নিমজ্জিত। একদিকে করোনায় জনজীবন অতিষ্ঠ, অন্যদিকে বিনিয়োগ প্রায় বন্ধ। নতুন চাকরীর পথ রুদ্ধ, হাজার হাজার মানুষ চাকরীচ্যুত। দ্রব্য মূল্য লাগামহীন এবং মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে। প্রতিদিন সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। সমাজে অত্যাচার, অনাচার কয়েক হাজারগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিনিয়ত ধর্ষণ, আত্মহত্যা, খুন, দুর্ঘটনা, দুর্নীতি এবং সর্বোপরি মাদকসেবীর সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমান সমাজ বসবাসের অনুপযোগী। মনে হয়, দেশে মনুষ্যত্ব এবং সভ্যতা লোপ পেয়েছে। এর মূল কারণ হচ্ছে, আমরা সকলে আল্লাহ্ এবং আল্লাহ্ রসুলের নির্দেশ অমান্য করে, অহংকার এবং প্রতিশোধের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করে চলেছি। ত্যাগের রাজনীতিতে আমরা বিশ্বাসী নই। ভোগের রাজনীতি হল আমাদের কাম্য। এর অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে শিক্ষিত, দেশ প্রেমিক এবং দক্ষ ব্যক্তিরা রাজনীতিতে টিকে থাকতে পারছে না। কারণ রাজনীতি এখন ব্যবসায়ীদের দখলে। ফলে রাজনৈতিক দলগুলিও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের একটি মাত্র উপায়, তাহল মনুষ্যত্বের বিকাশ এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা। সমাজে এই দুইটি জিনিস নিশ্চিত করতে পারলেই দেশ পুনরায় সঠিক পথে পরিচালিত হবে। কাউকে না কাউকে দেশকে সঠিক পথে আনার দায়িত্ব নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এভাবে ছেড়ে দিয়ে বসে থাকলে হবে না।
এছাড়াও যোগ্য ব্যক্তিদের মূল্যায়ন নাই এবং চাকরী হচ্ছে না। সকল ক্ষেত্রে দলীয় ক্যাডারদেরকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। ফলে দুর্নীতি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনগণ তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সকলের জন্য সমান অধিকার বলে কোন জিনিস নাই। এমনকি মনের ভাব প্রকাশ করারও কোন উপায় নাই। কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রকাশ করারও সুযোগ নাই। সর্বত্র চলছে অরাজকতা, মনে হচ্ছে আমরা ধর্ষণ এবং মাদকের দেশে বসবাস করছি।
শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ বৃদ্ধি পেলে এবং জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি হলে দেশে উন্নতি হয়েছে বলে, সন্তুষ্ঠ হওয়ার কিছুই নাই। সবচেয়ে বড় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মানুষের মনের শান্তি, যা সম্পূর্ণভাবে অনুপস্থিত। সর্বত্র আতংক বিরাজ করছে। রাজনীতিবিদরা আজ সমগ্র দেশে পাগলের মত ক্ষমতা এবং টাকার পিছনে দৌঁড়াচ্ছে। কারণ তারা আল্লাহ্কে বিশ্বাস করে না।
আজ আপনাদের সম্মুখে দেশের দুঃশাসনের কিছু চিত্র সংক্ষেপে তুলে ধরতে চাই।
১। মহিলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে ৪৬২২ জন নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে, ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৭০৩ জন। ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ২৪৫ জনকে। অপহরণের শিকার হয়েছে ১৪৭ জন। নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে ২৬৪ জন। এছাড়াও ২০০১-২০১৮ সাল পর্যন্ত ধর্ষণের পরিসংখ্যান আতঙ্কিত হওয়ার মত। বেসরকারী মানবধিকার সংগঠনের তথ্য অনুসারে ঐ সময়ে মোট ধর্ষণের শিকার ১৩৬৩৮ জন, দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ২৫২৯ জন, শিশু ধর্ষণের সংখ্যা ৬৯২৭ জন, ধর্ষণ পরবর্তী খুন ১৪৬৭ জন এবং ধর্ষণ পরবর্তী আত্মহত্যা ১৫৪ জন। পত্র পত্রিকায় দেখেছি ধর্ষণ রোধকল্পে সরকার জনগণের দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে মৃত্যুদ-ের ব্যবস্থা করেছে। আমি মনে করি, এতে ধর্ষণ হ্রাস পাবে না। কারণ সঠিকভাবে এবং সঠিক সময়ে তদন্ত করা এবং ধর্ষকের বিরুদ্ধে তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। তা না হলে কখনোই এ অবস্থার উন্নতি হবে না। কারণ এদের অধিকাংশই সরকারী দলের সদস্য। বিগত ২০ বছরে বড় বড় কোন দুর্নীতিবাজের শাস্তি এখনও হয় নাই। অধিকাংশ ধর্ষণ মামলার নিষ্পত্তি হয় নাই, এর অন্যতম আর একটি কারণ হচ্ছে আইন পেশার সাথে যারা জড়িত কিছু সংখ্যক ব্যক্তি সামান্য টাকার বিনিময়ে দেশকে বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মানুষ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
২। দুর্নীতি সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। বিগত ১৫ বৎসরে বিভিন্ন সুত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক এবং দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত প্রায় ৩ লক্ষ হাজার কোটি টাকা যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মরিসাস, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালেশিয়া, সৌদি আরব এবং দুবাইতে পাচার হয়েছে। এই টাকাগুলি হচ্ছে, সাধারণ মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত অর্থ এবং দেশের মানুষের সম্পদ। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী এবং কিছু কিছু ব্যবসায়ীরা ঐ সমস্ত দেশগুলিতে টাকা পাচারের সাথে সাথে নিজেদের জন্যও দ্বিতীয় বাসস্থান হিসেবে ঐ দেশগুলিকে গ্রহণ করেছে। তারা আজ ধরা-ছোঁয়ার বাহিরে। সরকারের শক্তিশালী ব্যক্তিরা যদি এই সমস্ত কর্মকা-ের সাথে জড়িত না থাকে তাহলে, কোন অবস্থাতেই কারো পক্ষে দেশ থেকে বিদেশে টাকা পাচার করা সম্ভব নয়। বর্তমান সরকার পাচারকৃত টাকাগুলি ফিরিয়ে আনার ব্যপারেও কোন উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করে নাই।
৩। ২০১৭ সালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৮ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে ইয়াবার ব্যবহার ৮০ শতাংশ বেড়েছে। আর ২০১৫ সারের তুলনায় ২০১৬ সালে বেড়েছে ৪৬ শতাংশ। ২০১২ সালে মোট মাদকসেবীর মধ্যে ইয়ারা আসক্তের সংখ্যা ছিল ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ, ২০১৬ সালে তা হয়েছে ৩১ দশমিক ৬১ শতাংশ।
২০১০ সালে বাংলাদেশে মাদকসেবীর সংখ্যা ছিল ৪৬ লাখ, বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ৭০ লাখ। ৭০ লাখের মধ্যে ১৫ বছরের বেশি মাদকসেবী আছে ৬৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ৭০ ভাগের বয়সই ১৫ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে।
বাংলাদেশের মাদক পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে মাদকাসক্তদের মধ্যে ৮৪ শতাংশ পুরুষ, ১৬ শতাংশ নারী। সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তি থেকে শুরু করে নারী ও শিশু-কিশোররাও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, দেশজুড়ে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ নানাভাবে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী দেশে আসক্তদের শতকরা ৯০ ভাগকে কিশোর-তরুণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের শতকরা ৪৫ ভাগ বেকার ও ৬৫ ভাগ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট। আর উচ্চশিক্ষিতের সংখ্যা ১৫ শতাংশ। তবে আরো বেশ কয়েকটি সংস্থার তথ্যানুযায়ী, অবৈধ মাদকদ্রব্য আমদানির জন্য প্রতিবছর ১০ হাজার কোটিরও বেশি টাকার মুদ্রা বিদেশে পাচার হচ্ছে।
৪। সকল পর্যায়ে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে এবং প্রত্যেক নাগরিকের মধ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মানসিকতা তৈরি করতে হবে। সেবা গ্রহীতা, সেবা প্রদানকারী, পর্যবেক্ষক ও তাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, সরকার, প্রশাসন এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যদি দুর্নীতিকে কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় এবং দুর্নীতির বিচারের সময় যদি দুর্নীতিকারীর পরিচয়, অবস্থান প্রভৃতি বিবেচনা করার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ নির্দেশনা না থাকে তাহলে দুর্নীতির মাত্রা এত বেশি হতো না।
৫। সুশাসনের অভাব এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণেই দেশে অর্থনৈতিক পরিবেশে ও সমাজে এক ধরণের বড় আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। এ কারণেই অর্থনীতির এত সম্ভাবনা সত্ত্বেও বিদেশে পুঁজি পাচার হচ্ছে এবং দেশের ভিতরে আশানুরূপ বিনিয়োগ বাড়ছে না। বিনিয়োগকারীদের জন্য অর্থনৈতিক নীতি ও শাসন ব্যবস্থার দীর্ঘমেয়াদি একটি টেকসই রাজনৈতিক ব্যবস্থা সরকার করতে পারে নাই।
৬। বর্তমান অবস্থায় আমরা মধ্যবর্তী বা পুনঃ নির্বাচন কোনটাই চাই না। নির্বাচন কমিশন, নির্বাচন পদ্ধতিসহ এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলির সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত দেশে কখনও সুষ্ঠ, অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন আশা করা উচিত হবে না। প্রথমে প্রয়োজন সংস্কার এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন। অতঃপর জাতীয় সংসদসহ সকল স্তরে নতুনভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠান। এতে জনগণের অংশগ্রহন শতভাগ নিশ্চিত হবে। সুতরাং আমাদের দাবী দক্ষ, অভিজ্ঞ, সৎ, শিক্ষিত এবং দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদদের দ্বারা গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
পরিশেষে বলতে চাই যে, শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর, সুশাসন ও দুর্নীতি কমিয়ে আনার অব্যাহত প্রচেষ্টা, গণতন্ত্র ও সুশাসনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আল্লাহ্ নিশ্চয় নিশ্চয় আমাদেরকে বর্তমান অসহনীয় অবস্থান থেকে জাতিকে উদ্ধার করবে।
এল.ডি.পি’র প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী’র বক্তব্য
তারিখ : ২৬/১০/২০১৯ইং
সরকারের বিদায় ঘণ্টার ধ্বনি শুনা যাচ্ছে- প্রয়োজন শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ
১। আপনাদের মাধ্যমে সকলের অবগতির জন্য আমরা বলতে চাই যে, বর্তমানে দুর্নীতির শিখড় সরকার, সরকারী দল, রাজনীতিবিদ এবং সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে প্রবেশ করেছে। যেমন- প্রত্যেক উপজেলা, পৌরসভা এবং জেলার সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দ, কিছু কিছু এমপি, তাদের পরিবারের সদস্য, এমপি’র স্ত্রী এবং অনেক মন্ত্রী’র নামও পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে। সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে বিগত ১০ (দশ) বছর পূর্বে তাদের সম্পদের পরিমাণ কত ছিল- বর্তমানে কত, তা বের করা উচিত। এতে করে দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করা সহজ হবে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে, জনগণের প্রতি অবিচার করা হবে। দুর্নীতিবাজদের সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করতে হবে। অন্যথায় দেশ আরো দ্রæত ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে। আল্লাহ্র নিকট আমরা দায়ী থাকব ।
২। অনুরূপভাবে সরকারের অনুগত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও অবৈধ টাকার পাহাড় গড়ে তুলেছে। নতুন ভাবে চাকুরিতে যোগদানের জন্যও টাকা দিতে হয়। ভাল পদে বদলীর জন্যও টাকা দিতে হয়। এমনকি পদোন্নতি পাওয়ার জন্যও টাকা দিতে হয়। এদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে হবে।
৩। আইন এবং প্রশাসনকে তার নিজস্ব গতিতে আইন অনুযায়ী চলতে দিতে হবে। নিরপেক্ষভাবে কাজ করার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। প্রয়োজনে নতুন আইন করতে হবে। কোন সরকারী বা বেসরকারী কর্মকর্তা/কর্মচারী কোন রাজনৈতিক দলের তাবেদার হিসেবে কাজ করবে না। তারা হবে জনগণের সেবক ও আইনের রক্ষক। সকল ক্ষেত্রে লোভ লালসার উর্ধ্বে উঠে মেধার ভিত্তিতে পদায়ন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এতেই দেশের মঙ্গল হবে। জনগণ উপকৃত হবে, গণতন্ত্র সুদৃঢ় হবে, সুশাসন এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।
৪। বর্তমানে সরকার মাদক, ক্যাসিনো, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি এবং অবৈধ অস্ত্রবাজদের বিরুদ্ধে যে ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, তা শুধু বড় বড় দুর্নীতি বাজদের রক্ষা করার জন্য জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরানোর প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। যে সমস্ত মন্ত্রী, এমপি বা তাদের পরিবার বস্তায় বস্তায় টাকা নিয়েছে, মার্সিডিস গাড়ী নিয়েছে তাদের নাম সুস্পষ্টভাবে পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। অদ্যবধি তারা ধরা-ছোঁয়ার বাহিরে। বর্তমান সরকারের আমলে জনগণের সম্পদ লুণ্ঠনকারী, ব্যাংক ডাকাত, শেয়ার মার্কেটের টাকা লুণ্ঠনকারীসহ বড় কোন দুর্নীতিবাজ এখনও পর্যন্ত শাস্তি পায় নাই। কারণ বিচারের দীর্ঘ সূত্রিতা এবং আইনের অপপ্রয়োগ। ফলে জনগণ কষ্ট পায় এবং হতাশাগ্রস্থ হয়। দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্থ হয়, সমাজ বিপদগামী হয় এবং দুর্নীতিবাজরা উৎসাহিত হয়। জনগণ মনে করে, দুর্নীতিবাজরা সব ম্যানেজ করতে পারে, তাদের টাকা কথা বলে। তাদের জামিন পেতেও সমস্যা হয় না।
৫। শেয়ার মার্কেট ও ব্যাংকের টাকা লুণ্ঠন- বর্তমান সরকারের আমলে ৩ বার শেয়ার মার্কেটে কারসাজি করে ধস্ নামানো হয়েছে, অনুরূপভাবে প্রায় দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে লুণ্ঠন করে এবং ঐ টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। সবাই জানে এর জন্য কারা দায়ী, সরকার কেন জানে না বা ঐ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয় নাই। জনগণ তা জানতে চায়। জনগণ মনে করে সরকারও এর সাথে জড়িত।
৬। জি কে শামীম ও স¤্রাট ব্যতীত অন্যান্য অনেকে যারা টেন্ডার, ক্যাসিনো ব্যবসা, চাঁদাবাজি, বিভিন্ন ভবন দখল এবং এমনকি বান্দরবানে নতুন নির্মিতব্য হোটেল মালিকদেরকে এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয় নাই। কারণ সরকার তাদের পৃষ্ঠপোষক।
৭। পত্র পত্রিকায় দেখলাম, সরকার তাদের দলের মধ্যে লুকিয়ে থাকা বহিরাগত দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তা খুবই প্রশংসনীয়, কিন্তু নিজের দলের চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের ব্যাপারে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, তা পরিস্কার করে বলছে না। কিছু কিছু চমক দেখিয়ে সরকার বাহাবা নিতে ব্যস্ত। জনগণ মনে করে, বিগত বছরে যারা মন্ত্রী/এমপি ছিল বা এখনও আছে তাদের ও তাদের স্ত্রী’র ওঞ জবঃঁৎহ চেক করলে দুর্নীতির অনেক নতুন নতুন তথ্য বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
৮। ১৯৯৬ সালের পর থেকে বিচার বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারী ও আধাসরকারী প্রতিষ্ঠান- যুবলীগ/ছাত্রলীগ এবং রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে দেশে সুশাসন ও ন্যায় বিচার বিলুপ্তির পথে। অথচ তারাই হচ্ছে জনগণের সেবক এবং ন্যায়দÐধারী।
৯। হঠাৎ করে শোরগোল শুরু হল যে, বিশ্ববিদ্যালয় হলগুলিতে র্যাগিং হয়। হলের চৎড়াড়ংঃ এবং টহরাবৎংরঃু ঠঈ এ ব্যাপারে অজ্ঞ। জনগণ জানে, নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য, কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদেরকে তারা বিপথগামী করেছে এবং অবৈধ কর্মকাÐে লিপ্ত হওয়ার জন্য সহযোগিতা করেছে। এ ধরণের র্যাগিং বর্বরতার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কখনও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে নাই। কারণ তারা অযোগ্য, অদক্ষ, দুর্নীতিবাজ ও দলীয় সেবা দাস। দলের আনুগত্যের কারণে পদায়ন হয়েছে। শিক্ষক হবে অভিভাবক, আদর্শবান, নীতিবান এবং পথ প্রদর্শক। সময় এসেছে এ ধরণের দেশদ্রোহী এবং জ্ঞানপাপী শিক্ষকদের চিহ্নিত করা এবং তাদেরকে চাকুরীচ্যুত করা। অন্যথায় শিক্ষার মান কখনো উর্ধ্বমুখী হবে না। জাতি হিসেবে আমরা ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাব।
১০। সামাজিক অবক্ষয় ও মনুষ্যত্ব লোপ পাওয়ার জন্য অনেকাংশে বর্তমান পারিপার্শ্বিক অবস্থা দায়ী। প্রতিনিয়ত পত্র পত্রিকায় দেখা যায়- বাবা, তার স্ত্রী ও ছেলে মেয়েদেরকে হত্যা করছে। স্বামী- স্ত্রীকে হত্যা করছে, স্ত্রী- স্বামীকে হত্যা করছে। যুবলীগ/ছাত্রলীগ ছাত্র-জনতাকে হত্যা ও নির্যাতন করছে। তাহলে সাধারণ মানুষের যাওয়ার জায়গা কোথায়। সমাজের এ অবস্থার জন্য কে দায়ী? আমাদের মধ্যে মনুষ্যত্ব কিভাবে লোপ পেল? সামাজিক অবক্ষয় এবং অস্থিরতার কারণ কি? সরকারকে অবশ্যই এর দায়-দায়িত্ব বহন করতে হবে, জওয়াবদিহি করতে হবে। আর সময় ক্ষেপন না করে, আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এর সমাধান বের করতে হবে। শুধু এক নুসরাত হত্যাকাÐের ত্বড়িৎ বিচার করে পার পাওয়া যাবে না। সাগর-রুনিসহ বহু হত্যাকাÐের বিচার যুগ যুগ ধরে ঝুলে আছে। এর জবাব কে দেবে।
১১। আমরা পরীক্ষায় অ+, এড়ষফবহ অ+ ও ডিগ্রি অর্জন করছি, কিন্তু সমাজ থেকে মনুষ্যত্ব হারিয়ে যাচ্ছে, মানুষ হচ্ছি না। এর জন্য দায়ী রাষ্ট্রের নীতি। শিক্ষা ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করতে হবে এবং মন্যুষত্ব বিকাশের জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। সার্টিফিকেট বিক্রি ব্যবসা বন্ধ করতে হবে।
১২। যানজটের কারণে জীবনের এক তৃতীয়াংশ সময় জনগণকে রাস্তায় কাটাতে হয়। এই যানজটের মূল কারণ, ফুটপাতে ব্যবসা বাণিজ্য, অবৈধ পার্কিং, ট্রাক ও বাস থেকে চাঁদাবাজী এবং রিক্সার দাপট। নতুনভাবে সংযোজন হয়েছে, গাড়ীতে ফিটনেস না থাকলে জরিমানা করা হয় এবং সাথে সাথে ন্যুনতম তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়। অন্যথায় রেহায় নাই। সরকার জেনে শুনেও নীরব দর্শকের ভুমিকা পালন করে যাচ্ছে। দুদকও নীবর ভুমিকা পালন করছে। কেন অবৈধভাবে চাঁদা তোলা হচ্ছে, কি কারণে ফুটপাত খালি করা হচ্ছে না, গাড়ির ফিটনেস চেক করতে কেন ঘুষ নেওয়া হচ্ছে, জনগণ এর জবাব চায়। এ অবস্থা থেকে যত দ্রত সম্ভব বেরিয়ে আসতে হবে। এটা মোটেও কঠিন বিষয় নয়। প্রয়োজন সদ্বিচ্ছা ও দৃঢ়তা।
১৩। দেশের বর্তমান করুণ অবস্থা এবং গণতন্ত্র ধ্বংসের জন্য নির্বাচন কমিশনও তাদের দায় এড়াতে পারে না। কারণ নির্বাচন কমিশন কখনও তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে নাই। বরং সরকারের সেবা দাস হিসেবে সবসময় কাজ করেছে। তাদের কর্মকাÐে জনগণের প্রতি কোন দায়দায়িত্ব আছে বলে মনে হয় না। জনগণকে তারা হতাশ করেছে। বর্তমানে নির্বাচন কমিশন ‘বেকার ও বৃদ্ধ পুনর্বাসন কেন্দ্র’ হিসেবে কাজ করছে। দেশপ্রেমিক, সৎ এবং দক্ষ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশনকে নতুন ভাবে ঢেলে সাজাতে হবে।
অনুরূপভাবে, দুদককেও পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার না করে, নতুন ভাবে ঢেলে সাজাতে হবে। দুদকের কর্মক্ষমতা, কর্মদক্ষতা, কর্মপরিধি, নিরপেক্ষতা এবং দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে। দলীয় ভিত্তিতে দুদকে নিয়োগ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে। তাহলেই দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব হবে।
বর্তমান সরকারের আমলে বিনা ভোটে ও ভোট ডাকাতির মাধ্যমে জাতীয় সংসদসহ সকল স্তরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, দিনের পরিবর্তে রাত্রির অন্ধকারে ব্যালট বাক্স ভর্তি করার প্রথা চালু হয়। ভোট ডাকাতি, একদলীয় শাসন কায়েমের মাধ্যমে অন্যায় অত্যাচার, টেÐারবাজী, চাঁদাবাজী, মাদক ব্যবসা, অস্ত্রবাজী, দুঃশাসন, অবিচার, দুর্নীতি, বাকস্বাধীনতা ও মানবাধিকার হরণ এবং সর্বস্তরে দলীয়করণসহ সকল ব্যাপারে সমগ্র পৃথিবী অবগত। দেশ আজ দোজখে পরিণত হয়েছে। জনগণ কি ধরণের দোজখের মধ্যে বসবাস করছে, তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। এখন প্রয়োজন সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ। যথাসময়ে দলে দলে ঐক্যবদ্ধভাবে ঘর থেকে বের হতে হবে। দেশকে সঠিক পথে পরিচালনার জন্য সকলকে ভুমিকা রাখতে হবে। ঘরে বসে থাকলে আর কখনও দেশে শান্তি ফিরে আসবে না। আসুন ঐক্যবদ্ধ হই, দেশকে রক্ষা করি। এতে করে সরকারের বিদায় ঘণ্টার ধ্বনি শুনা যাবে।
ইন্সআল্লাহ্ উত্তরণ ঘটবে, পুনঃ নির্বাচন হবে। সৎ, নিষ্ঠাবান এবং দেশপ্রেমিক ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নতুন সরকার গঠিত হবে। তাদের মাধ্যমে জনগণের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটবে। প্রতিহিংসা, প্রতিশোধের রাজনীতির অবসান হবে। সুশাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হবে। সত্যিকার অর্থে জনগণের সরকার দেশ পরিচালনা করবে এবং গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করবে।