১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের রাষ্ট্র বিপ্লবের পরিপূর্ণ, সুগভীর এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ ইতিহাস আমি আমার লিখনীর মাধ্যমে সঠিকভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমাদের বিদ্রোহের কারণ, কোন্ পরিস্থিতিতে আমরা বিদ্রোহ করি এবং কে নেতৃত্ব দেনÑএসব বিষয়ের বিচার-বিশ্লেষণ ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়ারও চেষ্টা করেছি। কিছু কিছু নতুন বিষয়ও সংযোজনের চেষ্টা করেছি যেগুলো ইতিপূর্বে রাষ্ট্র বিপ্লব সম্বন্ধে কোন লিখনীতে অন্তর্ভুক্ত হয়নি এবং বিশেষ করে ইতিহাসের অজানা অধ্যায় (মিছিং লিঙ্ক); যেমন- ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ হইতে ১৭ই এপ্রিল পর্যন্ত সময়কাল, যখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের দ্বারা গঠিত কোন সরকার ছিল না, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এই সময়ে নিজেদের উদ্যোগে নিজেরাই যুদ্ধ পরিচালনা করেন। এর পূর্ণ বিবরণ জানার জন্য প্রয়োজন ‘রাষ্ট্রবিপ্লব, সামরিক বাহিনীর সদস্যবৃন্দ এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ নামক প্রকাশনাটি পড়তে হবে। অন্যথায় সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা সম্ভব নাও হতে পারে।
পাক্ হানাদার বাহিনীর সময় বা চূড়ান্ত মুহূর্তে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের এবং সামরিক অফিসারদের ভূমিকা সম্বন্ধে সঠিক মূল্যায়ন এবং বিশ্লেষণের জন্য একটি কাঠামো উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে। এই রাষ্ট্রবিপ্লবে আমার ভূমিকা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারা যাবে, যদি কেউ তৎকালীন ব্রিগেডিয়ার জিয়াউর রহমান BU, psc এর ১৯৭৩ সালে লেখা নিম্নোক্ত আমার বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন মনোযোগ সহকারে পড়েন, যা তৎকালীন সেনাপ্রধান ব্রিগেডিয়ার কে. এম সফিউল্লাহ BU, psc সমর্থন করে স্বাক্ষর করেন। অধিকাংশ সিনিয়র অফিসার আমার বিভিন্ন বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে আমাকে সেনাবাহিনীর সম্পদ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। তার দালিলিক প্রমাণ রয়েছে। তৎকালীন মেজর জিয়া আমার সম্বন্ধে লিখেন যে,
“তিনি অত্যন্ত অনুগত, সাহসী এবং নিবেদিতপ্রাণ একজন অফিসার, অর্পিত দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি যে কোন ধরনের ঝুঁকি নিতে পারেন। তিনি অত্যন্ত ক্ষিপ্রধী সম্পন্ন এবং যে কোন জটিল পরিস্থিতি সহজে অনুধাবন করতে পারেন এবং প্রশংসনীয়ভাবে সহজে সামাল দিতে পারেন । তিনি অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য এবং তাঁর অধীনস্থদের প্রতি অত্যন্ত সদাশয়।
৭১ সালের ২৫/২৬ শে মার্চ রাতের চূড়ান্ত মুহূর্তে চট্টগ্রামে, এই অফিসার ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বিদ্রোহে প্রধান ভূমিকা পালন করেন।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে প্রবল প্রতিকূলতার মুখে এবং প্রতিপক্ষের শত্রুর সম্মুখে এই অফিসার অত্যন্ত সাহসিকতার পরিচয় দেন। বহু অভিযানে তিনি প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখেন। বিগ্রেড মেজর হিসাবে তিনি চমৎকার দায়িত্ব পালন করেন, অধিকাংশ সময় ডি. কিউ. এম. জি. হিসাবেও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন।
যুদ্ধের মাঠে তাঁর নেতৃত্বের গুণাবলী অন্যান্যদের প্রেরণার উৎস ছিল। এমনকি ভারতীয় অফিসারসহ যাঁরা মাঝে মাঝে ‘জেড’ ফোর্সের সাথে কর্মকান্ডে লিপ্ত হতেন তাঁদের কাছেও।”
১৯৭৪ সালে দ্বিতীয় বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনটি লেখেন তৎকালীন বিগ্রেডিয়ার মীর শওকত আলী BU, psc, এবং তৎকালীন সেনাবাহিনীর ডেপুটি চীফ হিসেবে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানও এটি সমর্থন করে স্বাক্ষর করেন।
“যেকোন বিষয় সংগঠনের ক্ষেত্রে এই অফিসারের অসাধারণ দক্ষতা আছে। তিনি অত্যন্ত পরিশ্রমী এবং তাঁর পদমর্যাদার চেয়েও অধিকতর দায়িত্ব পালনে সক্ষম। যদি এই অফিসারকে সঠিকভাবে পরিচালনা করা হয় তিনি সেনাবাহিনীর গর্বে পরিণত হবেন। যুদ্ধের সময় তাঁর অবদান প্রশংসনীয়Ñ বস্তুত, তিনিই প্রথম অফিসার যিনি ঝুঁকি নিয়েছিলেন এবং নিজ উদ্যোগেই জেনারেল জিয়াউর রহমানকে ৭১ সালের ২৫/২৬ মার্চ রাতে স্বাধীনতা ঘোষণার কথা বলেন।” (বিস্তারিত তথ্যের জন্য; পরিশিষ্ট-৮ দেখুন)
এই রাষ্ট্রবিপ্লবে নেতৃত্ব দেয়ার এবং অংশ নেয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। নিঃসন্দেহে, আমি উপকৃত হয়েছি এবং মুক্তিযুদ্ধে মূল নেতৃত্বদানকারীদের অন্তর্দৃষ্টি এবং সাক্ষাতকারের মাধ্যমে এই রাষ্ট্রবিদ্রোহে আমার ভূমিকা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
আমি আমার পি.এইচ.ডি এর যেই গবেষণা সম্পন্ন করেছি তা আমার বিবেচনায় মৌলিক, হয়তো আমার এই গবেষণা সমাজের অনেক মানুষকেই ১৯৭১ সালের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলি পুনরায় পর্যালোচনা করতে উদ্বুদ্ধ করবে এবং আমি বিশ্বাস করি আমার এই অভিসন্দর্ভ হয়তো ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রারম্ভিক ইতিহাসের পরিপূর্ণ অনুসন্ধানে সহায়ক হবে।
জনাব কাদের সিদ্দিকী, বীরোত্তম তাঁর প্রকাশিত বই স্বাধীনতা’ ৭১ এর ৪২০ নম্বর পৃষ্ঠায় শেষ তিন পংত্তিতে ডক্টর কর্নেল অলি আহমদ, বীর বিক্রম সম্বন্ধে লিখেন যে, ‘আর, জিয়ার সকল অবদান, সকল কৃতিত্ব ও সকল মহিমার পেছনে ক্যাপ্টেন অলি আহমদের দান সর্বাধিক অথবা ষোল আনাই। পরম বিশ্বাস, আনুগত্য ও ভালবাসা নিয়ে অলি আহমদ যুদ্ধের শুরু থেকে তাঁর (জিয়ার) মৃত্যু পর্যন্ত সাথে ছিলেন।
৩। বাংলা বই (PDF File) রাষ্ট্রবিপ্লব সামরিক বাহিনীর সদস্যবৃন্দ এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ